ধূমপানে শিশুর ক্ষতি
আমরা জানি ধুমপান মানব দেহের জন্য ক্ষতিকর। ধুমপানের ফলে আপনার শরীরে মরণব্যাধি ক্যান্সার বাসা বাধতে পারে। ধুমপান স্বাস্থ্যির জন্য ক্ষতিকর। ধুমপান না করেও আপনি এবং আপনার শিশু ধুমপানকারীদের মতো স্বাস্থঝুঁকি ও মারাত্তক জটিল রোগে আক্রমন হতে পারেন। কিভাবে আক্রান্ত হয় নিম্নে আলোচনা করা হলো।
ধুমপানকারীদের সিগারেটের ধোয়ায় তার সাথে থাকা মানুষের প্রায় সমপরিমাণ ক্ষতি হয়ে থাকে। মূলত তারা ধুমপান না করেও ধুমপায়ীদের মতো স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে পড়ে। তাদের কে আমরা সেকেন্ডহ্যান্ড ধুমপানকারী বলতে পারি। সাধানরত আমাদের অজান্তেই ধুমপায়ীদের মতো আমাদের শরীরে ৪০০ রাসায়নিক যৌগ প্রবেশ করছে। প্রায় ৫০ টির ও বেশি মরণব্যাধি ক্যান্সার তৈরী করতে পারে এই রাসায়নিক যৌগগুলো।
পেডিএট্রিক্স আমেরিকার একটি একাডেমির গবেষনায় দেখা যায় যে আমাদের মাঝে থার্ডহ্যান্ড ধুমপানকারীও ব্যাপক পরিমাণে লক্ষ করা যায়। আপনি যদি ধুমপানকারীর সাথে না থাকলেও এমন কিছু জায়গায় যায় এবং যাচ্ছে, সেই জায়গাগুলোতে একটু আগেই ধুমপানকারী ধুমপান করেছেন। এইসব স্থানে পাওয়া যায় ধুমপানের টক্সিন। যেমন, গৃহসজ্জার সামগ্রীতে,জামাকাপড়ে,গাড়ীর সিটে এবং ধুমপান কারীর শরীরে এমনকি চুলেও কম করে হলেও ৩/৪ ঘন্টা বিষাক্ত রাসায়নিক থাকে।
বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকা এই ঢাকা সিটির চারিদিকে মিলে প্রায় ৯৫ শতাংশ শিশুর শরীরে ক্ষতিকর নিকোটিন আছে। যুক্তরাজ্যের অক্সফোর্ড হতে নিকোটিন আন্ড টোব্যাকো রিসার্চ এক প্রতিবেদনে প্রকাশিত বাংলাদেশকে নিয়ে গবেষনা করে প্রকাশ করেন। আর এটা হয়ে থাকে একমাত্র সেকেন্ডহ্যান্ড ধুমপানকারীদের কারনে। রাজধানীর মিরপুর ও সাভার ৬ টি স্কুলের শিশুদের মাঝে লালা পরীক্ষা করে ৪৭৯ টি শিশুর লালায় মারাত্তক ক্ষতিকর নিকোটিন পাওয়া যায়। আর এর জন্য দায়ী সেকেন্ডহ্যান্ড ধুমপানকারী।
ধূমপানের বিপজ্জনক দিকগুলো
গর্ভকালীন সময়ে আপনি নিজে ও আপনার পরিবারের সদস্যদেরকে ধুমপান থেকে বিরত রাখুন। কেননা পরিবারের কেউ যদি ধুমপান করে তাহলে আপনিও সেকেন্ডহ্যান্ড ধুমপায়ী হিসেবে ঝুকির মধ্যে অবস্থান করবেন। বিশেষ এক গবেষনায় দেখা যায় যে তাতে আপনি ও আপনার শিশু সহ ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারেন। নিম্নে সমস্য গুলো সম্পর্কে আলোচনা করা হলো।
- অপরিপূর্ন শিশুর জন্ম হতে পারে।
- ডিম্বানু নিশিক্ত হওয়ার পর ২০ সপ্তাহের মধ্যে যে কোন সময় প্রসাবের পথ দিয়ে বের হয়ে যেতে পারে। আর এটাই হলো মিসক্যারেজ।
- শিশুর মনোযোগে এবং বিভিন্ন বিষয় সম্পর্কে জ্ঞানঅর্জন করতে সমস্যা দেখা দিতে পারে।
- শিশুর ওজন স্বাভাবিক এর চেয়ে পরিমানে কম হতে পারে।
- Sudden infant death synodrome (SIDS) সিন্ড্রোমে আক্রান্ত বা অকাল মৃত্যু হতে পারে।
- শিশুর দাঁতে ক্ষয়রোগ হতে পারে।
- এ ছাড়াও শিশুর শ্বাসনালী আকারে ছোট হয়। এতে করে শিশু খুব দ্রুত শ্বাস প্রশ্বাস নিয়ে থাকে। ধুমপানকারীর ধোঁয়ায় তাদের সর্দিকাশি, হাঁপানী,ও নিউমোনিয়ার ঝুকি বেড়ে যায়। এবং শিশুদের শ্বাসনালী ও ফুসফুস ক্ষতির সম্মুক্ষীন হয়।
দীর্ঘমেয়াদী যে প্রভাবগুলো পড়তে পারে
- ফুসফুসে ক্যান্সার হতে পারে।
- ধুমপায়ী অভিভাবকদের দেখে শিশুরাও শিখে নেয় এবং বড় হওয়ার সাথে সাথে ধুমপায়ী হওয়ার সম্ভাবনা অনেকটা বেড়ে যায়।
- ফুসফুসের কাজ হ্রাস পায়।
- Cataracts (চোখে ছানি পরতে পারে)।
- হৃদরোগ হতে পারে।
এর থেকে মুক্তি পেতে আমরা যা করতে পারিঃ প্রথমত, আমরা এর থেকে বাচতে ধুমপান ত্যাগ করবো আর এটা হলো উত্তম একটা পন্থা। আর এটা যদি ত্যাগ করতে না পারেন। তাহলে বাড়ীর বাহিরে গিয়ে ধুমপান করুন। এতেও যদি সমস্যা হয় তাহলে বাসার এমন একটি জায়গা নির্বাচন করে নিন যে স্থানে অন্যান্য সদস্যরা প্রবেশ না করে।
দ্বিতীয়ত, আমরা বাহিরে চলতে গেলে দেখতে পাই যে গাড়ীতে জানালার গ্লাস খুলে ধুমপান করে থাকেন। এটা কিন্তু ধোয়া বের হওয়ার জন্য যথেষ্ট নয়। বাহিরের বাতাসে আবার গাড়ীর ভিতরে ধোয়া চলে আসে। এজন্য যানবাহনে ধুমপান না করাই উত্তম।
তৃতীয়ত, আপনার শিশুকে স্কুলে ভর্তি করানোর আগেই আপনার স্কুল সম্পর্কে জানা উচিৎ যে, স্কুলে অবস্থানকালীন সময়ে কেউ ধুমপান করে কিনা।
চতর্থত, স্কুলে বাচ্চারা যেখানে খেলাধুলা করে সেখানে বা তার আশে পাশে ধুমপান করে কিনা সেদিকেও খেয়াল রাখা উচিৎ।
পঞ্চমত, আপনি যদি রাস্তার পাশে কোন পাব্লিক জায়গায় ধুমপানকারীকে ধুমপান করতে দেখেন তাহলে অবশ্যই তাকে সচেতন করবেন।
আরও পড়ুনঃ