প্রিয় পাঠক বন্ধুরা, আজকের পর্বে আমরা আলোচনা করতে যাচ্ছি আয়কর রিটার্ন কি? আয়কর রিটার্ন দাখিলের নিয়ম ও আয়কর রিটার্ন তৈরিতে কি কি তথ্যাদি প্রয়োজন তার একটি সংক্ষিপ্ত আলোচনা।
আয়কর রিটার্ন কি
আয়কর কর্তৃপক্ষের নিকট ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের বাৎসরিক আয় ও সম্পত্তির সংক্ষিপ্ত বিবরণ উপস্থাপন করার মাধ্যম হচ্ছে আয়কর রিটার্ন। আয়কর রিটার্নের কাঠামো আয়কর বিধি দ্বারা নির্দিষ্ট করা আছে। আয়কর আইন অনুযায়ী জাতীয় রাজস্ব বোর্ড কতৃর্ক নির্ধারিত ফরম পূরণ করে আয়কর রিটার্ন দাখিল করতে হয়।
আয়কর রিটার্ন দাখিলের নিয়ম
আয়কর রিটার্ন দাখিলের নিয়ম নিম্নে আলোচনা করা হলোঃ
কাদের আয়কর রিটার্ন জমা দিতে হবে
বাংলাদেশের নাগরিক এবং যাদের ই-টিআইএন সার্টিফিকেট রয়েছে, সবাইকেই আয়কর রিটার্ন দাখিল করতে হবে। আয়কর রিটার্ন দাখিল করতে হলে অবশ্যই একজন অভিজ্ঞ ব্যক্তিকে দিয়ে ফরম পূরণ করানো উচিৎ। সেখানে কোন ধরনের ভুল হওয়াটা ভবিষ্যতের জন্য বিপদজ্জনক। কারণ ফরমে যদি কোন ধরনের ভুল ইনফরমেশন প্রদান করেন সেক্ষেত্রে পরবর্তীতে আপনার সম্পদের প্রবিদ্ধি নিয়ে বিভিন্ন ধরনের ঝামেলার সম্মুখীন হবেন। অনেকক্ষেত্রে সম্পত্তির উপর ট্যাক্স/জরিমানা ধার্য হতে পারে।
আয়কর রিটার্নের হিসাবের খাত
যে সব বিষয়ে আয়কর এবং রিটার্ন দিতে হয়
- চাকরি হতে পাওয়া বেতনাদি।
- নিরাপত্তা জামানতের সুদ।
- কৃষি ক্ষেত্রে আয়
- ব্যবসা থেকে আয়।
- অন্য কোন পেশার আয়।
- নির্দিষ্ট মূলধন থেকে প্রাপ্ত মুনাফা।
- গৃহ সম্পত্তি থেকে প্রাপ্ত আয়সমূহ।
- মূলধনী মুনাফা।
- অন্য যেকোনো উৎস থেকে আয়।
উপরের ক্ষেত্রগুলো থেকে যদি আয়কর যোগ্য ইনকাম হয় সেক্ষেত্রে অবশ্যই আয়কর দিতে হবে। তবে করযোগ্য আয় না থাকলে শুধু আয়কর রিটার্ন দাখিল করতে হবে।
আয় অনুযায়ী করের হার
কোন ব্যক্তির যদি করযোগ্য আয় থাকে তাহলে তাকে অবশ্যই আয়কর প্রদান করতে হবে। চলুন জেনে আসি আয় করের হার
প্রথম 3,00,000.00 লক্ষ টাকার পর্যন্ত আয়কর শূন্য।
পরবর্তী 1,00,000.00 লক্ষ টাকা আয়ের জন্য ৫%।
পরবর্তী 3,00,000.00 টাকা পর্যন্ত আয়ের জন্য ১০%।
পরবর্তী 4,00,000.00 টাকা পর্যন্ত আয়ের জন্য ১৫%।
পরবর্তী 5,00,000.00 টাকা পর্যন্ত আয়ের জন্য ২০%।
এর পরবর্তী সকল আয়ের জন্য ২৫%।
আয়কর রিটার্ন তৈরি করতে প্রয়োজনীয় তথ্যাদি
বর্তমানে আয়কর জমা করলে বিগত অর্থ আয়কর রিটার্ন জমা দিতে হবে। তাই, আয়বর্ষ হবে 2022-23 এবং করবর্ষ হবে 2023-24 হিসেবে আয়কার রিটার্ন ফাইল তৈরি করতে হবে। আয়কর রিটার্ন ফরম পূরণ করতে প্রয়োজনীয় তথ্যাদি নিম্নরূপঃ
- জাতীয় পরিচয়পত্রের ফটোকপি।
- টিআইনএন সনদপত্রের ফটোকপি।
- মোবাইল নম্বর
- বর্তমান ঠিকানা ও স্থায়ী ঠিকানা
- পেশা চাকুরিজীবী হলে, বেতন বিবরণী এ্বং ব্যবসায়ী হলে ট্রেড লাইসেন্স।
- বাড়ি ভাড়া থেকে আয় থাকলে, বাড়ি ভাড়া প্রাপ্তির রশিদ।
- ব্যাংক স্টেটমেন্ট, প্রতিটি ব্যাংক একাউন্টের স্টেটমেন্ট দিতে হবে*। (01 জুলাই 2022 থেকে 30 জুন 2023)
- সঞ্চয়পত্র, এফডিআর অথবা যেকোন প্রকার ডিপজিটের প্রত্যয়নপত্র *। (01 জুলাই 2022 থেকে 30 জুন 2023)
- ক্রয়কৃত সম্পত্তি হলে সম্পত্তির দলিল ও ওয়ারিশসূত্রে প্রাপ্ত হলে নামজারী/খাজনার রশিদ *।
- ব্যাক্তিগত গাড়ী/মোটর বাইক থাকলে, গাড়ী ক্রয়ের প্রমাণপত্র এবং ট্যাক্স টোকেনের কপি *।
- কোন প্রকার লোন/ব্যাংক ঋন থাকলে ঋণের প্রত্যয়ন। অর্থাৎ বিগত অর্থবছরে কত টাকা লোন পরিশোধ করা হয়েছে এবং বছর শেষে কতটাকা লোন অবশিষ্ট আছে, তার প্রমাণপত্র *। (প্রত্যয়নপত্র- 01 জুলাই 2022 থেকে 30 জুন 2023 পর্যন্ত)
- আপনার উপর খরচ নির্ভরশীল পরিবারের সদস্য সংখ্যা।
শতর্কতাঃ
লাল স্টার মার্ক করা তথ্যাদি দ্বারা আপনার সম্পত্তি ও দায় বোঝানো হয়। আপনার সম্পদ দ্বারা দায় বাদ দিয়ে নীট সম্পদ নির্ণয় করা হয়। সম্পত্তির উপরে ট্যাক্স হয় না, ট্যাক্স হবে আপনার আয়ের উপর। তাই আয়কর রিটার্নে সম্পত্তি প্রদর্শন করা ভয়ের কিছু না বরং প্রদর্শন না করলে বিপদে পরতে হবে। পরবর্তী বছরে ঐ সম্পত্তি প্রদর্শিত হলে বা কোন অডিট হলে ঐ সম্পত্তির উপর 25% পর্যন্ত ট্যাক্স কর্তন হতে পারে। অর্থাৎ সম্পত্তিটি পরবর্তী বছরে আয় হিসেবে গণ্য হবে। ফলে আপনার প্রথম 16,00,000/- টাকার উপরে 5%-20 পর্যন্ত ট্যাক্স ধার্য হবে 16,00,000/- টাকার উপরে যা থাকবে তার উপর 25% হারে ট্যাক্স ধার্য হবে।
সুতারাং, আপনার কোন সম্পত্তি গোপন না করে সবি রিটার্নে প্রদর্শন করুন। আপনি বিগত বছরগুলো সার্ভিস করছেন কিংবা ব্যবসা করছেন, সেক্ষেত্রে আপনার সম্পদ থাকতেই পারে। তাই প্রথম বছরেই আপনার সমস্ত সম্পদ প্রদর্শন করুন।
সমাপনীঃ
উপরে উল্লেখিত তথ্যগুলোর মাধ্যমে সঠিকভাবে আয়কর রিটার্ন তৈরি তৈরি করা সম্ভব। এছাড়াও, আয়কর রিটার্ন তৈরি সংক্রান্ত বিষয়ে সহায়তার জন্য আমাদের সাথে যোগাযোগ করতে পারেন।
আরিফুর রহমান
মোবাইলঃ 01929-273244 (হোয়াটঅ্যাপ)
ইমেইল: [email protected]
আরও পড়ুন