Close

ব্রহ্ম, ঈশ্বর, ভগবান ও জীবাত্মা কাকে বলে?

ঈশ্বরের অনেক নাম রয়েছে এবং আমরা উপাসনার জন্য তাঁকে বিভিন্ন নামে ডাকি। যেমন— ব্রহ্ম, ইশ্বর, পরমাত্মা, ও ভগবান, ইত্যাদি। ঋষিগণ ইশ্বরকে পরমাত্মা, ভগবান বা ব্রহ্ম বা ও আত্মা বা জীবাত্মারূপে উপলব্ধি করেছেন এবং তাঁর স্বরূপ নিয়ে ব্যাখ্যা করেছেন। আজ আমরা ঋষিদের বর্ণনানুসারে ব্রহ্ম, ঈশ্বর, ভগবানের ও জীবাত্মার পরিচয় জানব।

ব্রহ্ম

হিন্দুধর্ম অনুসারে এই বিশ্বব্রহ্মাণ্ড ব্রহ্মই সৃষ্টি কেরেছেন। ব্রহ্ম সর্বশক্তিমান, সর্বজ্ঞ, সকল জীব ও জড়ের স্রষ্টা। বিশ্বব্রহ্মাণ্ডে যা-কিছু ঘটছে এবং যা কিছু আছে সবই তাঁর কারণে। ঋষিরা নিরাকার ব্রহ্মকে বোঝানোর জন্য ‘ওঁ’-এ প্রতীকী শব্দটি ব্যবহার করেছেন। সাধারনত, ব্রহ্ম শব্দের অর্থ হলো বৃহৎ। ব্রহ্মা বৃহত্ত্বাৎ বা বৃহৎ বলেই তাঁর নাম ব্রহ্ম। এছাড়া ব্রহ্মকে বলা হয়েছে- তিনি সত্য বা সত্যই ব্রহ্ম। আবার কোনো-কোনো ঋষি বলেছেন, ব্রহ্ম আনন্দস্বরূপ। মানুষের আনন্দ ব্রহ্মেরই আনন্দ। বিভিন্ন স্থানে এই ব্রহ্মকেই আবার বলা হয়েছে পরমাত্মা।

ঈশ্বর

‘ঈশ্বর’ শব্দের অর্থ হলো প্রভু। তিনি জীবের জগতের ও সকল কাজের প্রভুত্বকারী। ব্রহ্ম যখন জীবকুলে সকল কাজ পরিচালনা ও নিয়ন্ত্রণ করেন এবং জীবের ওপর প্রভুত্ব করেন তখন তাঁকে ঈশ্বর বলা হয়। নিরাকার ঈশ্বর নিজের ইচ্ছা মতো নিজের আনন্দের জন্য নিজেকে নানারূপে জীবের মাঝে প্রকাশ করেন। ঈশ্বরই বলা হয় অবতার। তিনি যখন দুষ্টের দমন করতে এবং শৃঙ্খলা ও ন্যায়-নীতি প্রতিষ্ঠা করতে পৃথিবীতে নেমে আসেন, তখন তাঁকে অবতার বল হয়। যেমন– রাম, মৎস্য, বরাহ, কূর্ম, বামন প্রভৃতি। ঈশ্বরের কোনো গুণ বা শক্তি আকার ধারণ করলে তাঁকে দেবতা বা দেব-দেবী বলে। যেমন— বিদ্যার দেবী সরস্বতী, শক্তির দেবী দুর্গা ইত্যাদি।

অর্থাৎ ঈশ্বর এক। বিভিন্ন অবতার বা দেব-দেবী হলো এক ঈশ্বরেরই বিভিন্ন শক্তির বহিঃপ্রকাশ। এই সব কাজকে ঈশ্বরের লীলা বলা হয়।

ভগবান

ঈশ্বরকে আমরা সর্বশক্তিমান হিসেবে ভক্তি ও শ্রদ্ধা ও ভক্তি করে থাকি। সর্বশক্তিমান কিংবা সবকিছুর নিয়ন্ত্রক বলে আমরা ইশ্বরকে সমীহ করি। তাঁকে ঘিরে আমাদের মধ্যে অনেক প্রকার ভালোবাসার সৃষ্টি হয়। আর এই ভালোবাসার অপর নাম হলো মায়া। এই মায়ার জালে সকল জীব জগত আবদ্ধ। আমাদের কোনোকিছুর সমস্যা বা অভাব ঘটলে ঈশ্বর আমাদের কাছে এসে উপস্থিত হন। তবে আমরা তাঁকে কখনোই দেখতে পাই না, কিন্তু অন্তরে উপলব্ধি করতে পারি। ভক্তদের নিকট ঈশ্বর ভগবানরূপে আবির্ভূত হয়। ভক্তদের কাছে ভগবান হলো আনন্দময়৷ ‘ভগ’ শব্দটির অর্থ হলো ঐশ্বর্য বা গুণ। ঈশ্বরের ছয়টি গুণ আছে– যশ, ঐশ্বর্য, বীর্য, জ্ঞান, শ্রী ও বৈরাগ্য। এই ছয়টি ঐশ্বর্য ভগ আছে বলেই ঈশ্বরকে ভগবান বলা হয়।

জীবাত্মা

যখন আত্মা বা পরমাত্মা জীবের মধ্যে অবস্থান করেন তখন তাঁকে জীবাত্মা বলা হয়। জীবাত্মারূপে ইশ্বর মানুষ, কীট-পতঙ্গ, পশু-পাখি সবকিছুর মধ্যেই অবস্থান করেন। তাই ঈশ্বরভক্তগণ প্রাণীকূলের সব কিছুই সমান দৃষ্টিতে দেখেন। কারো প্রতি হিংসা, বিদ্বেষ প্রদর্শন করেন না। কারণ জীবের প্রতি হিংসা, বিদ্বেষ করলে ঈশ্বরকেই হিংসা করা হয়।

আরো পড়ুন

Related Posts

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *