তরঙ্গ
আমরা সবাই কম বেশি তরঙ্গ দেখেছি। পানিতে যখন কোন বস্তু পরে বা ঢিল ছুড়া হয় তখন সেই নির্দিষ্ট বিন্দু থেকে পানির তরঙ্গ চারদিকে ছড়িয়ে পড়ে। ঘরে লাইট জ্বালালে আলো ঘরের চারদিকে ছড়িয়ে পড়ে, সেটাও এক প্রকার তরঙ্গ। আমরা যখন কথা বলি তখন যে শব্দ হয় সে শব্দটা যখন এক স্থান থেকে অন্য স্থানে পৌঁছে, সেটাও তরঙ্গ। একটা স্প্রিং সংকুচিত করে আবার ছেড়ে দিলে তার ভিতর দিয়ে যে বিচ্যুতিটি ছুড়ে যায় সেটাও তরঙ্গ। এক কথায় বলা যায়, আমার নানা ভাবে তরঙ্গ কি সেটা অনুভব করতে পারি। কিন্তু এটা মূলত সংজ্ঞা নয়। তাহলে চলুন জেনে নেই, তরঙ্গ কাকে বলে? তরঙ্গ কত প্রকার ও কি? এবং তরঙ্গের বৈশিষ্ট্য ইত্যাদি সম্পর্কে।
তরঙ্গ কাকে বলে?
যে পর্যাবৃত্ত আন্দোলন কোন জড় মাধ্যমের এক স্থান থেকে অন্য স্থানে শক্তি সঞ্চারিত করে থাকে কিন্তু মাধ্যমের ক্ষুদ্র কণাগুলোকে স্থানান্তরিত করে না তাকে তরঙ্গ বলে। যেমন – মহাকর্ষীয় তরঙ্গ, তড়িৎ চুম্বক তরঙ্গ,পানির তরঙ্গ ইত্যাদি।
তরঙ্গ কত প্রকার ও কী কী?
মাধ্যমের কণাগুলোর কম্পনের দিক ও তরঙ্গ প্রবাহের দিকের ওপর ভিত্তি করে তরঙ্গকে দুই ভাগে ভাগ করা হয়েছে। যেমন –
- অনুপ্রস্থ তরঙ্গ ও
- অনুদৈর্ঘ্য তরঙ্গ
নিম্নে তরঙ্গের প্রকার সময়হ সংক্ষেপে আলোচনা করা হলোঃ-
১। অনুপ্রস্থ তরঙ্গ
যে তরঙ্গ কম্পনের দিকের সাথে লম্বভাবে অগ্রসর বা প্রবাহিত হয়, তাকে অনুপ্রস্থ তরঙ্গ বলে। যেমন – পানির তরঙ্গ হলো অনুপ্রস্থ তরঙ্গের উদাহরণ।
২। অনুদৈর্ঘ্য তরঙ্গ
যে তরঙ্গ বিন্দু হতে কম্পনের দিকের সাথে সমান্তরালভাবে অগ্রসর হয়, তাকে অনুদৈর্ঘ্য তরঙ্গ বলা হয়। যেমন – বায়ু মাধ্যমে শব্দের তরঙ্গ উদাহরণ।
অনুপ্রস্থ তরঙ্গে উৎপন্ন সর্বোচ্চ বিন্দুকে তরঙ্গশীর্ষ ও সর্বনিম্ন বিন্দুকে তরঙ্গপাদ বলা হয়। তেমনিভাবে অনুদৈর্ঘ্য তরঙ্গের অনুরূপ রাশি হলো সঙ্কোচন ও প্রসারণ।
তরঙ্গের বৈশিষ্ট্য
- মাধ্যমের কণাগুলোর স্পন্দন গতির ফলে তরঙ্গ সৃষ্টি হয়ে থাকে কিন্তু মাধ্যমের কণা স্থান পরিবর্তন করে না।
- তরঙ্গের কম্পন, বিস্তার ও তরঙ্গদৈর্ঘ্য আছে।
- তরঙ্গ স্থির বা অগ্রগামী হতে পারে।
- সকল তরঙ্গই তথ্য ও শক্তি সঞ্চারণ করে।
- তরঙ্গ প্রবাহের দিক থাকে।
- তরঙ্গ এক স্থান থেকে অন্য স্থানে শক্তি সঞ্চারণ করতে পারে।
- তরঙ্গের প্রতিফলন, প্রতিসরণ, অপবর্তন ও ব্যতিচার ঘটে।
- যান্ত্রিক তরঙ্গ সঞ্চালনের জন্য কোন না কোন মাধ্যমের প্রয়োজন হয়।
- তরঙ্গের বেগ কেমন হবে তা মাধ্যমের প্রকৃতির উপর নির্ভরশীল।
তরঙ্গ মাধ্যম
তরঙ্গ যে জড় মাধ্যম দ্বারা সঞ্চারিত হয় তাকে তরঙ্গ মাধ্যম বলে। তরঙ্গ মাধ্যমকে নিম্নোক্তভাবে ভাগ করা যায়। যথাঃ
- সীমিত মাধ্যম
- অসীম মাধ্যম
- সরলরৈখিক মাধ্যম
- হোমোজেনিয়াস বা সম মাধ্যম ও
- আইসোট্রপিক মাধ্যম
তরঙ্গ সৃষ্টির কারণ
আমাদের দৈনন্দিন জীবনে তথ্য ও শক্তি আদান প্রদানের অন্যতম মাধ্যম হলো তরঙ্গ। এমনকি তরঙ্গ ব্যতীত আমরা সূর্য থেকে তাপ বা আলো কোনোটাই পেতাম না। কোন শব্দ কিংবা কথা শুনতে পারতাম না। তাই তরঙ্গ সৃষ্টি হয়।
FAQ’s
তরঙ্গ সঞ্চারিত হওয়ার সময় নির্দিষ্ট দিকে একক সময়ে যে দূরত্ব অতিক্রম করে তাকে তরঙ্গ বেগ বলে।
পানির ঢেউ অনুপ্রস্থ তরঙ্গ কারণ এই জাতীয় তরঙ্গ পানির কণার স্পন্দনের দিকের সাথে লম্বভাবে অগ্রসর হয় এবং পর্যায়ক্রমে তরঙ্গশীর্ষ ও তরঙ্গপাদ থাকে। তাই পানির ঢেউ একটি অনুপ্রস্থ তরঙ্গ।
আরও পড়ুন
