অন্যের সম্পত্তি অন্যায়ভাবে দখল করার জন্য অনেকেই দলিল জালিয়াতি করে। এতে সম্পত্তির মূল মালিক নানাভাবে ঝামেলার সম্মুখীন তো হয়ই, সেই অধিকার বঞ্চিত হওয়ার সম্ভাবনাও থেকে যায়। আপনার সাথে এমন পরিস্থিতিতে কী করবেন? চলুন আজকের আয়োজনে আমরা জেনে নেই জাল দলিল কাকে বলে, জাল দলিল চেনার উপায় ও জাল দলিল বাতিল করার উপায় সমূহ।
জাল দলিল কাকে বলে
জাল দলিল সাধারণত আসল দলিলের সাথে মিল রেখে পুরো নকল কপি তৈরি করা হয়ে থাকে। মূল দলিল ঘষামাজা করে তুলে কিংবা ওভাররাইটিং করে দাতা বা গ্রহীতার নাম, দাগ নম্বর বা খতিয়ান নম্বর এবং সম্পত্তির চৌহদ্দি পরিবর্তন করেও দলিলটি জাল হতে পারে। সাধারণভাবে, দলিলে ঘষামাজা বা ওভাররাইটিং গ্রহণযোগ্য হয় না। এর জন্য ধোঁকাবাজরা বিশেষ প্রযুক্তির ব্যবহার করে থাকে। যাতে ভালো করে না খেয়াল করলে তাদের তৈরি করা জাল দলিলকে আসল দলিলের মতোই মনে হয়। এ ছাড়াও রেজিষ্ট্রি অফিসের সিল এবং সাব-রেজিস্ট্রারের স্বাক্ষর জাল জালিয়াতির মাধ্যমেও জাল দলিল তৈরি হতে পারে।
যেক্ষেত্রে জমির দলিল জাল হতে পারে
- বেশির ভাগ ক্ষেত্রে আত্মীয়স্বজনরাই নিজেদের ভাগের সম্পত্তি বাড়িয়ে নিতে দলিল জাল করে থাকে। যেমন- এজমালি সম্পত্তি অথার্ৎ ভাইবোন মিলে যে সম্পত্তি প্রাপ্ত হয়, এ ক্ষেত্রে দেখা যায় ভাইয়েরা বোনদের না জানিয়ে সম্পত্তির বাটোয়ারা দলিল নিজেদের নামেই করিয়ে থাকে। মালিকানা ছাড়াই নিজেরা দলিলদাতা সেজে বা কাউকে মালিক/দলিল দাতা সাজিয়ে সাব-রেজিস্ট্রি অফিস থেকে জমি রেজিস্ট্রি করে নেওয়া হয়। অনেক সময় অপির্ত সম্পত্তি বা মৃত ব্যক্তির সম্পত্তি ঐ ব্যক্তিকে জীবিত দেখিয়ে জাল করা হয়।
- আশপাশের প্রতিবেশীর সঙ্গে জমি নিয়ে কোন বিরোধ থাকলেও জমির দলিল জাল হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
- সাধারণত যেসব ক্ষেত্রে আদালত থেকে সম্পত্তির বণ্টননামা সম্পন্ন করা হয় না, সে ক্ষেত্রে দলিল জালের সম্ভাবনা থাকে।
- সম্পত্তির মালিক বিদেশে থাকলে মূল দলিল থেকে জালিয়াতি করা হতে হয়ে থাকে।
- অনেক সময় বিশেষ উপায়ে পুরানো দলিল ঘষামাজা করে এবং ওভাররাইটিং বা কাটাছেঁড়া করেও দলিল জাল করা যেতে পারে।
- দলিলের মূল তারিখ ঠিক রেখে বিষয়বস্তুও জাল করা যেতে পারে।
জাল দলিল চেনার উপায়
কোনো দলিল নিয়ে সন্দেহর সৃষ্টি হলে রেজিস্ট্রি অফিসে সংরক্ষণ করা দলিলের সঙ্গে সাল মিলিয়ে দেখতে পারেন। এ জন্য নির্দিষ্টভাবে সাব-রেজিষ্ট্রি অফিসে দরখাস্ত করতে হবে। দরখাস্তে দলিলটির যাবতীয় তথ্য উপস্থাপন করতে হবে। যেকোন দলিল সাব-রেজিস্ট্রি অফিসে দলিলের প্রকৃতি অনুযায়ী চারটি রেজিস্ট্রার বা ভলিউমে সংরক্ষিত থাকে। সেই সঙ্গে জমি কেনার সময় বিক্রেতার কাছ থেকে সব দলিল, বিশেষ করে বায়া দলিল চেয়ে নিতে হবে। সাব-রেজিস্ট্রি অফিস থেকে সব দলিলের ক্রমিক নম্বর জানতে হবে, দলিল নম্বর ঠিক আছে কিনা দেখার জন্য।
জাল দলিল বাতিলের উপায়
জাল দলিল সম্পর্কে জানার সাথে সাথে জাল দলিল বাতিলের জন্য দেওয়ানি আদালতে মামলা দায়ের করতে হবে। তামাদি আইনের প্রথম তফসিলের ৯১ অনুচ্ছেদ অনুসারে, এই মামলা জাল দলিল সৃজন সম্পর্কে জানার/অবগত হওয়ার ৩ বছরের মধ্যে করা যাবে।
জাল দলিল সৃজনকারীদের বিরুদ্ধে বাংলাদেশ দণ্ডবিধির ৪০৬/৪২০/৪৬৩-৪৭৩ ধারায় শাস্তির জন্য ফৌজদারি মামলা দায়ের করা যাবে। জাল দলিল বাতিলের জন্য, সুনির্দিষ্ঠ প্রতিকার আইন ১৮৭৭ এর ধারার বিধান অনুসারে জাল দলিল তৈরিকারীদের বিরুদ্ধে দেওয়ানি মামলা করা যাবে। উল্লেখিত সুনির্দিষ্ট প্রতিকার আইনের ৪০ ধারা অনুসারে, জাল দলিল আংশিক বাতিলের জন্যও মামলা করা যাবে।
জমি দখলে না থাকলে, দলিল বাতিলের সঙ্গে সম্পত্তির দখল বুঝে পাবার মামলাও করা যায়। আদালত কর্তৃক দলিল বাতিলের আদেশ/রায় প্রদান করা হলে ডিক্রির একটি কপি সংশ্লিষ্ট সাব-রেজিস্ট্রি অফিসে প্রেরণ করতে হবে। উক্ত কপির আলোকে রেজিস্ট্রি অফিস জাল দলিল বাতিলের বিষয়টি সংশ্লিষ্ট বালাম বহিতে/ভলিউমে লিপিবদ্ধ করে রাখবেন।
দলিল বাতিলের মামলা করতে হবে, কোর্ট ফি আইনের দ্বিতীয় তফসিলের ১৭ (৩) অনুচ্ছেদ অনুসারে বর্ণিত কোর্ট ফি প্রদান করতে হবে।
আরও পড়ুনঃ